Logo
Logo
×

সারাদেশ

ঘুষ ছাড়া সরকারি গুদামে ওঠে না কৃষকের ধান

Icon

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি :

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ১২:৪৬ পিএম

ঘুষ ছাড়া সরকারি গুদামে ওঠে না কৃষকের ধান

ছবি - অষ্টগ্রাম উপজেলার সরকারি খাদ্যগুদাম

সরকার নির্ধারিত দামে ধান বিক্রি করতেও লাগে ঘুষ। না দিলে গুদামে ওঠে না কৃষকের ধান। হাওরের জেলা কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার চিত্র এমনই। ভিডিও প্রমাণসহ পাওয়া গেছে দুর্নীতির এমন এক চিত্র।

অষ্টগ্রাম উপজেলার সরকারি খাদ্যগুদামের অভ্যন্তরের একটি কক্ষের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সরকারি খাদ্য পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন ভূইয়া সরাসরি এক কৃষকের কাছে প্রতি টন ধানে দুই হাজার টাকা ঘুষ দাবি করছেন।

সরকারি রেট অনুযায়ী, প্রতি মণ ধানের দাম ১৪৪০ টাকা। একজন কৃষক সর্বোচ্চ তিন টন পর্যন্ত ধান সরবরাহ করতে পারেন। সরকারি দামে প্রতি টনে কৃষক পাচ্ছেন বাজার দরের চেয়ে গড়ে ছয় হাজার টাকা বেশি। আর সেখান থেকেই তিন ভাগের একভাগ দাবি করছেন পরিদর্শক।

শুধু ঘুষ নয়, প্রতি মণের ওজন হিসাবেও চলছে কারচুপি। ৪০ কেজির জায়গায় ৪২ কেজি করে মেপে নিচ্ছেন। ফলে এক টন ধানে আরও ৯০০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এই কর্মকর্তা। প্রথমে তিনি ভিডিওটি নিজের বলে স্বীকার করলেও পরে দাবি করেন, এটি এডিট করা।
উপজেলার এই অফিসের চিত্র আরও ভয়াবহ। প্রহরী শাহ আলম অফিস করছেন লুঙ্গি পরে। কাগজ প্রস্তুত বাবদ প্রতি টনে তিনি নিচ্ছেন ২৭০ টাকা। বিষয়টি তার কাছে জানতে চাইলে তেড়ে আসেন সাংবাদিকের ওপর, কড়া গালিগালাজ ও একপর্যায়ে মোবাইল ছুড়ে ফেলে দেন।

হাওর অধ্যুষিত এই অঞ্চলটি ছয় মাস পানিতে তলিয়ে থাকে। ফলে বোরো ধানের ফলনই তাদের সারা বছরের খোরাক। কিন্তু এর ন্যায্যমূল্য পেতে প্রতিবারই হিমশিম খেতে হয়। তাদের শেষ ভরসা সরকারের কাছে বিক্রির মূল্য পেতেও গুনতে হয় অতিরিক্ত উৎকোচ।

চাষিরা বলছেন, যারা প্রকৃত কৃষক তারাই ধান দিতে পারছেন না, এমনকি লিস্টে নাম আছে এমন অনেকেই জানেন না তাদের নামে ধান সরবরাহ করা হয়েছে।
কৃষক শামসুল হক বলেন, সরকারি গুদামে ধান নিয়ে গেলে তারা বলে ধান ভেজা। পরে প্রতি টন ধানে দুই হাজার টাকা দাবি করে। টাকা দিলে আবার সেই ধানই ‘ঠিকঠাক’ হয়ে যায়! উপরন্তু গুদাম পর্যন্ত ধান পৌঁছাতে গাড়িভাড়া দিতে হয়। সবমিলিয়ে যে খরচ হয়, তাতে বাজারদরেই ধান বিক্রি করা ভালো মনে হয়। তাই আমি ধান নিয়ে যাই না।

কৃষক ইয়াসিন মিয়া জানান, ধান নিয়ে গেলে কর্মকর্তারা বলেন ধান ঠিকমতো শুকায়নি। অথচ আমার চেয়ে কম শুকানো ধানও তারা নিচ্ছে। পরে শুনি, যারা টাকা দেয় তাদের সব ধানই ঠিক হয়ে যায়। এটা কীভাবে সম্ভব? এটা সরাসরি দুর্নীতি।

কৃষক জাকির হোসেন বলেন, আমি কোনো দিনই সরকারি গুদামে নিজের ধান দিতে পারিনি। অথচ আমার নামের কার্ড ব্যবহার করে অন্য কেউ ধান দিয়েছে। এ বছর সরকার ১৪৪০ টাকা মণপ্রতি ধান কিনছে, কিন্তু তবুও আমি দিতে পারিনি। পরে জানতে পারি, আমার নামে স্লিপ ইস্যু করা হয়েছে। কে দিয়েছে আমি জানি না। আমি সরকারের কাছে এর সঠিক তদন্ত এবং জড়িতদের শাস্তি চাই।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন ভূইয়া অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি কোনো ঘুষ চাইনি, ভিডিওটি বিভ্রান্তিমূলকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কারো সঙ্গে কোনো সময় আমার এমন কথা হয়নি।

এ সময় যারা সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করেছেন তাদের তালিকা চাইলে তিনি তালিকা দিতে অস্বীকৃতি জানান।

অষ্টগ্রাম উপজেলা খাদ্যশস্য সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. দিলশাদ জাহান জানান, এই বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করে দেখব। আমি ওই কর্মকর্তার সঙ্গে নিজেই কথা বলব। যদি আমরা এই অভিযোগের সত্যতা পাই, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কিশোরগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আলমগীর কবির বলেন, কৃষকদের সঙ্গে যে বিষয়টি ঘটেছে আমরা তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

স্থানীয় সচেতন মহল ও কৃষকরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, এমন ঘটনা কৃষকদের মধ্যে হতাশা তৈরি করছে এবং সরকারি খাদ্য সংগ্রহ কার্যক্রমের প্রতি আস্থা হারাতে বসেছে।



Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন