কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানা : ওসির বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ০১:৫৫ পিএম
বসতবাড়ির গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানার ওসি মো. লিটন মিয়ার বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা জানায়, গাছ কাটার বিষয়ে থানায় গেলে ওসি মামলার ভয় দেখিয়ে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে ৫ হাজার টাকা দিলে গাছ কাটায় আর বাধা না দেওয়ার আশ্বাস দেন।
এদিকে রেলওয়ে পুলিশ বলছে, গত ১৭ জুন ইশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়ি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো. রতন মিয়ার রেইনট্রি গাছ কাটা নিয়ে রেলওয়ের উর্ধতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পিডব্লিউ) আনিসুজ্জামান রাজন রেলওয়ে ওসিকে জানান। এরপর রেলওয়ে থানার এএসআই পারভেজ ও কনস্টেবল রুবেল মিয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করে রতন মিয়ার মেয়ের জামাই দ্বীন ইসলামের জিম্মায় রাখেন।
মেয়ের জামাই দ্বীন ইসলাম বলেন, গত মঙ্গলবার বিকালের দিকে রেইনট্রি গাছ কেটে ট্রলিতে তোলার সময় রেলওয়ে পুলিশ এসে বাধা দেয়। তখন পুলিশ তাদের বলেন ওসির কাছে অভিযোগ আছে গাছ থানায় নেওয়া লাগবে। এরপর এএসআই পারভেজ রেলওয়ে ওসির সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দেন। ওসি বলেন, রেলওয়ে পিডব্লিউ রাজন সাহেবের সাথে কথা বলেন। প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান রাজনকে কল দিলে তিনি জানান কাল কিশোরগঞ্জ এসে ঝামেলা শেষ করেন। এরপর পুলিশ গাছ রেখে দিয়ে বলে যায় থানায় গিয়ে ওসির সাথে দেখা করতে।
দ্বীন ইসলাম আরও বলেন, পরেরদিন অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে সকাল ১০টায় কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানায় গেলে দায়িত্বরত পুলিশ বলেন ওসি বাইরে আছেন। এরপর রাজনকে কল দিলে তিনি বলেন, উনি মিটিংয়ে। ওসির সাথে বিষয়টি মিটমাট করে নেন। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর বিকাল ৪টার দিকে রেলওয়ে থানার ওসি থানায় আসেন। এরপর আমাদের ডেকে নিয়ে ওসি বলেন ‘রেলওয়ের মামলা বোঝেন! বাড়িঘর বিক্রি করেও মামলা শেষ হবে না। আইডব্লিউ, পিডব্লিউ বিষয়টা জানেন- লাখ টাকা দিয়েও শেষ করা যাবে না।’ তখন ওসির সাথে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তা আমাদের ১০ হাজার টাকা দিতে বলে। এরপর ৫হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি আসার পথে ওসি লিটন কল দিয়ে বলেন গাছ কাটতে সমস্যা নেই। পরে শুক্রবার গাছ কেটে মিলে নিয়ে যায়।
মো: রতন মিয়ার স্ত্রী কমলা আক্তার জানান, আমার জামাইয়ের জায়গায় রেইনট্রি গাছ কিন্তু গাছ কাটার পর রেলওয়ে পুলিশ এসে বাধা দিয়ে থানায় নিয়ে যেতে চায়, পরে বলে থানায় গিয়ে ওসির সাথে দেখা করতে। আমি অসুস্থ হাত ভাঙা অবস্থায় মেয়ের জামাইকে নিয়ে কিশোরগঞ্জে রেলওয়ে থানায় আসি। রেলওয়ে ওসি আমাদের নানান হুমকিধমকি ও মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করলে আমি তিন হাজার টাকা দেই। তখন তারা বলে হবে না। এরপর মেয়ের জামাই মোবাইল থেকে দুই হাজার টাকা তুলে আনলে মোট পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে চলে আসি।
এ বিষয়ে রেলওয়ের উর্ধতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পিডব্লিউ) আনিসুজ্জামান রাজন বলেন, আমার এক স্টাফ গাছ কাটা নিয়ে খবর দিলে আইডব্লিউ ও রেলওয়ে থানার ওসিকে জানাই। এরপর সেখানে পুলিশ গেলে কি হয় জানি না। তারা কিশোরগঞ্জ এসে কল দিলে আমি বলি মিটিংয়ে কিশোরগঞ্জের বাইরে আছি, এটা আমার বিভাগের কিছু না, ওসির সাথে কথা বলেন। নাম ভাঙিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, কেউ তাঁর নাম ভাঙিয়ে কিছু করে থাকলে ব্যবস্থা নিবেন।
অভিযোগের বিষয়ে রেলওয়ে থানার ওসি মো: লিটন মিয়া ‘উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিষেধ আছে’ উল্লেখ করে প্রথমে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে কথা বলতে রাজি হন তিনি।
অভিযোগের ঘটনা মিথ্যা উল্লেখ করে ওসি লিটন মিয়া বলেন, পিডব্লিউ রাজন সাহেব কল করে বলেন রেলওয়ের জায়গায় গাছ কাটা হচ্ছে। এরপর আমি ফোর্স পাঠাই। পরদিন গাছ কাটা নিয়ে লোক এলে ওদের বলি এসব আমাদের বিষয় না, আইডব্লিউ-পিডব্লিউ তাদের সাথে কথা বলেন। কমলা ও তার মেয়ের জামাইয়ের সাথে আমার কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি।



