Logo
Logo
×

সারাদেশ

ঘোষণাতেই থেমে আছে পাবনা চিনিকল চালুর কার্যক্রম

Icon

পাবনা প্রতিনিধি :

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ১০:৩৯ এএম

ঘোষণাতেই থেমে আছে পাবনা চিনিকল চালুর কার্যক্রম

ছবি - অকেজো হয়ে পড়ে আছে মিলের যন্ত্রপাতিসহ শতাধিক যানবাহন

চার বছর বন্ধ থাকার পর পাবনা সুগার মিলস লিমিটেড পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয় এ ঘোষণা দেয়। এতে আশায় বুক বেঁধেছে আখচাষিসহ এ অঞ্চলের মানুষ।

তবে বন্ধ ৬টি চিনিকল চালুর ঘোষণার পর ৭ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত পাবনা 
সুগার মিল চালুর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। মিলের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলছেন, আখ মাড়াই চালুকরণের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ঘোষণার পর আর কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে ৬টি মিলের মধ্যে পাবনা সুগার মিল দ্বিতীয় ধাপে চালুর নির্দেশনা রয়েছে। প্রথম ধাপে শ্যামপুর, সেতাবগঞ্জ চিনিকল চালুর প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাবনা সুগার মিল কবে নাগাদ চালু হতে পারে তা চলতি বছরের আখ রোপণ মৌসুম সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বোঝা যাবে। যদি এ মৌসুমে আখ রোপণের নির্দেশনা আসে তাহলে মিল দ্রুত চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।
১৯৯২ সালে ২৭ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়াতে ৬০ একর জমির ওপর পাবনা সুগার মিল স্থাপিত হয়। ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ মিলটি ১৯৯৭-৯৮ মাড়াই মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। পরের বছর থেকেই বাণিজ্যিকভাবে মাড়াই মৌসুম চালু করে কারখানাটি।

ক্রমাগত লোকসানের ভার বইতে না পেরে ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর পাবনা সুগার মিলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে শিল্প মন্ত্রণালয়। বন্ধ হওয়ার প্রায় চার বছর পর পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। কিন্তু কবে নাগাদ এ মিল চালু হতে পারে তা কেউ সঠিকভাবে জানাতে পারেননি।

এদিকে নষ্ট হচ্ছে মিলের মূল্যবান যন্ত্রপাতিসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। পাবনা সুগার মিল বন্ধ থাকায় অধিকাংশ কৃষক আখের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার কয়েক হাজার আখচাষিসহ মিলের সঙ্গে জড়িতরা, কর্মহীন হয়ে পড়েছে অনেক মানুষ। সেইসঙ্গে অকেজো হয়ে পড়ে আছে মিলের যন্ত্রপাতিসহ শতাধিক যানবাহন।

সরেজমিন দেখা যায়, সুগার মিলের প্রবেশপথে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। প্রবেশপথের পাশেই রাখা বড় সাইনবোর্ডের ভগ্নদশা দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোনো চিনিকলের সাইনবোর্ড। গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে নিরাপত্তা প্রহরী আর প্রশাসনিক কাজ চালু রাখতে এমডিসহ কয়েকজন কর্মচারী ছাড়া কারো দেখা মেলেনি। চিনিকলের ভেতরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে আখ পরিবহনের দুই শতাধিক ট্রলি। ট্রলিগুলো জঙ্গল আর লতাপাতায় ঢাকা পড়েছে। মাড়াইয়ের যন্ত্রপাতিগুলোও বছরের পর বছর পড়ে থাকায় মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। মিলের ভবন ও আশপাশের দোকানপাটের বেহালদশা দেখে মনেই হচ্ছে না এখানে সুগারমিল ছিল। একসময় প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা এই মিলটি এখন নীরব-সুনসান।

বর্তমানে মিলটির প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দেনা রয়েছে। মিলটিতে স্থায়ী, অস্থায়ী ও মৌসুমভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০ জন। বর্তমানে তাদের অনেকেই চলমান অন্যান্য চিনিকলে কর্মরত আবার কেউ কেউ পেশা বদলে সংযুক্ত হয়েছেন অন্য পেশায়। এছাড়াও পাবনা চিনিকলের অন্তর্গত ৮টি আখ উৎপাদন জোন ছিল। এ চিনিকলটি বন্ধ হওয়ার পর চারটি আখ উৎপাদন জোনকে নিকটবর্তী গোপালপুর চিনিকলের সঙ্গে ও বাকি চারটি জোনকে নাটোর চিনিকলের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। তবে বর্তমানে ৮টি জোনেরই আখ উৎপাদন স্থগিত হয়ে গেছে।
আখ মাড়াই প্ল্যান্টসহ চিনিকলে প্রায় ৮০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় মাড়াই যন্ত্রের ডোঙ্গা, নাইফ, ক্রাসার, বয়লার হাউজ, রুলার, ড্রায়ারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও বর্তমানে মিলে ৮ জন কর্মকর্তা, ১৫ জন কর্মচারী ও ৩০ জন নিরাপত্তা প্রহরী কর্মরত রয়েছেন। এদের মাসিক বেতনবাবদ সরকারকে প্রায় ১৪ লাখ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।

দাশুড়িয়া মনসিদপুর এলাকার আখচাষি আমিরুল ইসলাম বলেন, আমরা এই চিনিকলে আখ বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু হঠাৎ করে এই সুগার মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। দীর্ঘদিন যাবত এই সুগার মিল বন্ধ থাকার কারণে আখের পরিবর্তে এখন অন্য ফসল আবাদ করছি।

পাবনা সুগার মিলস আখচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও জাতীয় স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কৃষক শাহজাহান আলী বাদশা বলেন, পাবনা সুগার মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আখচাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ মিলের অধীনে ৩৫০০ কৃষক আখ চাষ করতেন। এসব কৃষক এখন বাধ্য হয়ে অন্য ফসল চাষাবাদ করছেন। পাবনা সুগারমিল খোলার ঘোষণা দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। তবে কবে নাগাদ খুলবে তা জানা যায়নি। সুগার মিল খুলতে মিল জোনে আগে আখ চাষ করতে হবে। আখ উৎপাদনের পর মিল খোলার ঘোষণা দিতে হবে। আখচাষিদের এখনো পর্যন্ত আখ চাষের ব্যাপারে কিছু জানায়নি।

পাবনা সুগার মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর আখ মাড়াইয়ের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এরপর মিল চালুর বিষয়ে আর কোনো নির্দেশনা আসেনি।


Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন