জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে ‘ইয়ুথ ফর ওয়াটার জাস্টিস’ শীর্ষক বিশ্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত
মোরছালীন বাবলা, আজারবাইজান (বাকু)থেকে
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
২০২৪ সালের আগস্টের বন্যার সময় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছিল সম্পূর্ণ নবীন, তাই সরকার বন্যা দুর্গতদের পাশে সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি। এই বন্যার জন্য বিশ্ব মোড়লরাও দায়ী থাকলেও বিশ্ববাসীও পাশে দাঁড়ায়নি। এসময় বন্যা দুর্গতদের জীবন বাঁচাতে ও বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে দেশের তরুণ সমাজ। ভয়াবহ এই বন্যা মোকাবিলার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যে জলবায়ুজনিত দুর্যোগ মোকাবিলা ও পানির ন্যায্যতা নিশ্চিতে তরুণদের সম্পৃক্ত করার বিকল্প নেই। তাই জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলায় জাতিসংঘের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তরুণদের 'পেইড ভলেন্টিয়ার' হিসেবে যুক্ত করার পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) আজারবাইজানের বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনের "ওয়াটার ফর ক্লাইমেট" প্যাভিলিয়নে আয়োজিত বিশ্ব সংলাপে বক্তারা একথা বলেন। যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে মিশন গ্রিন বাংলাদেশ (এমজিবি), ইয়ুথ প্লাটফর্ম ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (ওয়াইপিএসডি), সেন্টার ফর এটমসফিয়ারিক পলিউশন স্টাডি সেন্টার (ক্যাপস), ন্যাচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (ন্যাকম) ও চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ।
ক্যাপসের চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কামারুজ্জামান সভাপতিত্ব ও তরুণ জলবায়ুকর্মী ফারিয়া অমির সঞ্চালনায় এই সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (ন্যাকম) এর নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. মনজুরুল হান্নান খান, মূল প্রবন্ধে তিনি আগস্টের বন্যার ভয়াবহতা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ও তরুণদের তৎপরতার চিত্র তুলে ধরেন।
সংলাপে প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসাইন খান, ওয়াটারকিপার্স সেনেগালের সমন্বয়ক এম্ব্যাক স্যাক, ক্লাইমেট ফরোয়ার্ড পাকিস্তানের শিশু ও যুব বিষয়ক উপদেষ্টামণ্ডলীর চেয়ারপার্সন মাহনুর রশিদ, ইয়ুথ প্লাটফর্ম ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট- ওয়াইপিএসডি'র প্রধান সমন্বয়ক সাইদুল ইসলাম, জাতিসংঘ জলবায়ু কর্মসূচির পানি ও জলবায়ু গবেষক আসিফ ইকবাল এবং মিশন গ্রীন বাংলাদেশের পরিচালক কেফায়েত শাকিল।
এম জাকির হোসাইন খান তার বক্তব্যে বলেন, ‘পানির ন্যায্যতা হল জলবায়ু ন্যায্যতার একটি বড় অংশ। জাতীয় এবং ক্রস বর্ডার ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট উভয়ের জন্য প্রকৃতিকেন্দ্রিক বৈশ্বিক শাসন আন্তঃপ্রজন্মের ন্যায্যতার চাবিকাঠি, বিশেষ করে তরুণরা যারা বিশ্ব জুড়ে প্রকৃতিভিত্তিক সমৃদ্ধির চালক।’
ড. আহমেদ কামারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক পরিসরে যতই ক্ষতিপুরন চাইনা কেন। আমাদের মন:স্তাত্তিক ক্ষয়ক্ষতি, পৈতৃক ঘর- বাড়ী হারানো, ধর্মীয় স্থাপনা হারানোর ক্ষতি আমরা কিভাবে কাভার করবো?’
তাই, শুধু ক্ষতিপুরনের দাবীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে তরুনদেরকে জলবায়ু, পানির ন্যায্যতা সহ সকল পরিবেশ সমস্যায় সম্পৃক্ত করা জরুরী।
এম্ব্যাক স্যাক বলেন, আমাদের সবারই উচিত তরুনদেরকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ এবং পানি ন্যায্যতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত করা।
মাহনুর রশিদ বলেন, পাকিস্তানের তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা, বাংলাদেশী স্বেচ্ছাসেবকদের মতোই, বিশেষ করে উত্তর পাকিস্তানে সাম্প্রতিক বন্যায় দুর্যোগ মোকাবেলায় উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে।
তাদের অবদানের ক্ষমতায়ন এবং স্বীকৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা একটি জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক ভবিষ্যত গড়ে তুলি, যেখানে সম্প্রদায়-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ এবং যুব-চালিত উদ্ভাবন বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রতিক্রিয়ার অগ্রভাগে রয়েছে এবং এর জন্য বৃহত্তর সমর্থন প্রয়োজন।
সাইদুল ইসলাম বলেন, তরুণরা ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলার মাধ্যমে স্পষ্ট করেছে যে, জলবায়ুজনিত দুর্যোগ মোকাবিলা ও পানির ন্যায্যতা নিশ্চিতে তরুণদের সম্পৃক্ত করার কোন বিকল্প নেই।
আসিফ ইকবাল বলেন, জরুরি প্রতিক্রিয়ার জন্য দুর্যোগ-প্রবণ এলাকায় তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে সমস্ত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সামগ্রীর অ্যাক্সেস রয়েছে তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাদের কর্মক্ষম ক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং এর জন্য সরকার তাদেরকে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, কর্মশালার সাথে সংযুক্ত করতে পারে।
আমাদের স্থানীয় পর্যায়ের সমস্যাগুলো আমাদের নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। যাইহোক, এটি অন্বেষণ করা যেতে পারে যে কীভাবে সরকার, জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থার তহবিলগুলি জরুরি প্রতিক্রিয়া প্রচেষ্টায় জড়িত সেই স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশংসা করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।