কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন
শাহবাগ মোড় থেকে সরে গেলেন শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ০৫:২৩ পিএম
আন্দোলনকারীদের অবরোধের কারণে রাজধানীর শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে৷ দেখা দিয়েছে যানজট। ছবি : সংগৃহীত
কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। তাদের বিক্ষোভ মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়ে নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাব ও বাটা সিগন্যাল মোড় ঘুরে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে থামে।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকাল পৌনে ৪টায় পদযাত্রা নিয়ে শাহবাগ গিয়ে অবরোধ করেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। সেখানে এক ঘণ্টা অবস্থান নেওয়ার পর সরে যান বিক্ষোভকারীরা। এরপর শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল আবার শুরু হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীর মিছিলটি শুরু হয় বেলা পৌনে তিনটার দিকে৷ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে নীলক্ষেত মোড়, সায়েন্স ল্যাব মোড় ও বাটা সিগন্যাল মোড় হয়ে শাহবাগে এসে মিছিলটি থামে৷ পরে শাহবাগ মোড়ে সড়কের ওপর অবস্থান নেন চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা
মিছিলে আন্দোলনকারীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ এমন নানা স্লোগান দেন৷ বিকেল পৌনে চারটার দিকে মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে পৌঁছায়৷ অবশ্য তার আগেই সেখানে সড়কের ওপর বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য অবস্থান করছিলেন৷ মুখোমুখি হয়ে পড়ার পর শিক্ষার্থীরা পুলিশকে ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন৷ একপর্যায়ে পুলিশ সরে যায়।
বিকাল পৌনে ৫টার দিকে শাহবাগ মোড় থেকে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল৷ এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়৷ কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে সে বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিল বিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটাব্যবস্থা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়৷ ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন৷ সেই রিটের রায়ে গত ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছেন।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ এই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা সেই পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি আরও কিছু দাবি জানাচ্ছেন।
এগুলো হলো—
পরবর্তী সময়ে সরকার কোটাব্যবস্থা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া, সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করার সুযোগ বন্ধ করা ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।