৭ বছরে আয় ১০০ কোটি টাকা
তরুণীদের ফাঁদে ফেলে মেডিকেল শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে যৌন ব্যবসা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪, ০৫:১২ পিএম
তরুণীদের ফাঁদে ফেলে যৌন ব্যবসায় বাধ্য করতো মেডিকেলের দুই শিক্ষার্থীসহ একটি চক্র। ছবি : সংগৃহীত
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাকরি দেওয়া কিংবা মডেল বানানোর বিজ্ঞাপনে দিয়ে তরুণীদের ফাঁদে ফেলে যৌন ব্যবসায় বাধ্য করতো মেডিকেলের দুই শিক্ষার্থীসহ একটি চক্র। এর মাধ্যমে ৭ বছরে কোটি কোটি টাকার আয় করেছে তারা।
গতকাল মঙ্গববার রাজধানী ঢাকা, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর ও যশোরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের মূলহোতাসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহম্মদ আলী মিয়া।
অভিযুক্তরা হলেন চক্রের মূলহোতা মেডিকেল শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান ও তার প্রধান সহযোগী খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন, জাহিদ হাসান কাঁকন, তানভীর আহমেদ ওরফে দীপ্ত, সৈয়দ হাসিবুর রহমান, শাদাত আল মুইজ, সুস্মিতা আক্তার ওরফে পপি এবং নায়না ইসলাম।
সিআইডি বলছে, চক্রটি ভুয়া নামে ফেসবুক আইডি ও পেজ খুলে ফ্রিল্যান্সিং কাজ, লোভনীয় চাকরি, মডেল বানানো, মেধা অন্বেষণের নামে অল্প বয়সী তরুণীদের কাছ থেকে কৌশলে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নিত। পরে এসবের সাহায্যে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে অনলাইনে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হতো। আটকদের কাছ থেকে পর্নোগ্রাফি তৈরি ও তরুণীদের ব্ল্যাকমেইলে ব্যবহৃত ১২টি মোবাইল ফোন, ২০টি সিম কার্ড, একটি ল্যাপটপ এবং আয়ের টাকা লেনদেনে ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও চেক বই জব্দ করা হয়েছে।
মোহম্মদ আলী মিয়া বলেন, চক্রটি মূলত উঠতি বয়সী তরুণীসহ যেসব তরুণী পারিবারিক ভাঙনের শিকার ও আর্থিক সমস্যা রয়েছে তাদের টার্গেট করতো। কাজের সুযোগ দেওয়ার নামে তারা তরুণীদের ইন্টারভিউতে ডাকতো এবং তাদের বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে সুযোগ দেওয়ার কথা বলে আপত্তিকর ছবি নিতো। প্রাথমিকভাবে কাজে আগ্রহী তরুণীদের চাহিদা মতো টাকা ও প্রয়োজন মেটাতো তারা। এরপর ধীরে ধীরে অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করতো বলেও জানান তিনি।
সিআইডিপ্রধান জানান, মেহেদী হাসান এবং তার খালাতো ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজন মিলে চক্রটি গড়ে তোলেন। তারা দুজনই মেডিকেল শিক্ষার্থী। অল্প বয়সী তরুণীদের ফাঁদে ফেলে যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট তৈরি ও টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ম্যাসেঞ্জারে নানা অসামাজিক কাজ করে ৭ বছরে তারা প্রায় ১০০ কোটি টাকা আয় করেছে। এই টাকা দিয়ে তারা যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা এবং ঢাকায় বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছে। নির্মাণ করেছে আলিশান বাড়ি। তাদের আত্মীয়-স্বজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও বিপুল অর্থ জমিয়ে রাখার তথ্য মিলেছে।
সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশ-বিদেশে চক্রটির রয়েছে শক্তিশালী একটি নেটওয়ার্ক। নানা নামে তাদের শতাধিক চ্যানেলে গ্রাহক সংখ্যা কয়েক লাখ। বিভিন্ন বয়সী নারীদের ভিডিও কল ও দেহব্যবসায় বাধ্য করে এবং গোপনে ধারণকৃত সেসব ভিডিও বিক্রি করে চক্রটি প্রায় ১০০ কোটি টাকা আয় করেছে। অর্থ লেনদেনের জন্য তারা ব্যবহার করতো এমএফএস বা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস। এছাড়া ক্রিপ্টো কারেন্সিতেও তাদের হাজার হাজার ডলার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, চক্রটির কন্টেন্ট আদান-প্রদান এবং সাবস্ক্রিপশনের জন্য ছিল টেলিগ্রাম প্রিমিয়াম অ্যাকাউন্ট এবং বিভিন্ন পেইড ক্লাউড সার্ভিস। অল্প বয়সী ভয়ানক চতুর এই দুই মেডিকেল শিক্ষার্থীর জিম্মায় কয়েক হাজার নারী রয়েছে। আছে টিকটক, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম সেলিব্রেটিও। অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপে গোপনে ধারণ করা প্রায় ১০ লাখ ন্যুড ছবি ও ২০ হাজার অ্যাডাল্ট ভিডিওর সন্ধান পাওয়া গেছে।
এ চক্রের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে বলেও জানান সিআইডির প্রধান।