Logo
Logo
×

রাজধানী

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা

যেভাবে গৃহকর্মী আয়েশার সন্ধান পায় পুলিশ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৫ পিএম

যেভাবে গৃহকর্মী আয়েশার সন্ধান পায় পুলিশ

ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে গৃহকর্মীর হাতে মা-মেয়ে হত্যার প্রায় ৬০ ঘণ্টার মাথায় মূল আসামি আয়েশাকে স্বামীসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তেজগাঁও বিভাগের তৎপরতায় পূর্বের চুরির তথ্য ও একটি মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে ‘ক্লুলেস’ এ ঘটনার রহস্য দ্রুত উদঘাটন করা হয়।

পুলিশ জানায়, মোহাম্মদপুর থানার অতীতের বিভিন্ন মামলা ও জিডির তথ্য বিশ্লেষণ করে আয়েশাকে শনাক্ত করা হয়। পরে ম্যানুয়াল সোর্স ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে অতিরিক্ত কমিশনার এন এস নজরুল ইসলাম এই তথ্য জানান। 

নজরুল ইসলাম জানান, গত ৮ ডিসেম্বর সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় ৩ দিন আগে কাজে যোগ দেওয়া গৃহকর্মী ‘আয়েশা’কে সন্দেহভাজন আসামি করে মামলা করেন নিহতের স্বামী আজিজুল ইসলাম (৫৭)।

আয়েশাকে সন্দেহ করা হলেও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এই গৃহকর্মীর কোনো ছবি, এনআইডি, মোবাইল নম্বর বা পরিচয় সংরক্ষিত না থাকা। সিসিটিভির ফুটেজেও তাকে চেনার মতো কোনো স্পষ্ট ভিজ্যুয়াল চিত্র পাওয়া যায়নি। কারণ সে প্রতিবারই বোরকা পরে, মুখ ঢেকে আসা-যাওয়া করত।

তিনি জানান, ঘটনার আশপাশে কোনো ডিজিটাল ক্লু না পেয়ে তদন্ত দল ‘ম্যানুয়াল’ উপায়ে থানায় আভিযোগ আসা গত এক বছরে গৃহকর্মী কর্তৃক সংঘটিত চুরির ঘটনাগুলো খুঁজতে থাকে। তদন্তকারীরা বিশেষভাবে লক্ষ্য করেন গলায় পোড়া দাগ, জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় বাস, গৃহকর্মীর পরিচয়ে সংঘটিত পূর্বের চুরি। এখানে একটি ঘটনায় আয়েশার তথ্য মিলে যায়। মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডের ভুক্তভোগী একটি পরিবার থেকে পুরনো একটি মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়, যা থেকেই শুরু হয় আসামি চিহ্নিত করার কাজ।

সিডিআরের বিশ্লেষণে পাওয়া অবস্থান ধরে হেমায়েতপুরে গিয়ে জানা যায়, নম্বরটি ব্যবহার করত রাব্বি নামে এক ব্যক্তি। তদন্তে বেরিয়ে আসে রাব্বির স্ত্রী আয়েশা। তারা পূর্বে জেনেভা ক্যাম্পে থাকত। বাদীর দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে এটি মিলে যায়। পরবর্তীতে হেমায়েতপুরে অভিযান চালানো হলে তাদের বাসার দরজায় তালা লাগানো পাওয়া যায়। এরপর পরিবারের সদস্যদের তথ্যের ভিত্তিতে আশুলিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। অবশেষে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চরকায়া গ্রামে দাদা শ্বশুরবাড়ি থেকে আয়েশা ও তার স্বামী রাব্বিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় আয়েশার কাছ থেকে একটি চুরি করা ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যার দায় স্বীকার করে জানায়, কাজে যোগ দেওয়ার দ্বিতীয় দিন সে ২ হাজার টাকা চুরি করে। তৃতীয় দিন টাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের সময় গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে তার তর্কাতর্কি হয়। চতুর্থ দিনে সুইচ গিয়ার চাকু লুকিয়ে বাসায় আসে আয়েশা। টাকা চুরির বিষয়টি নিয়ে সেদিনও তর্কাতর্কি হয় গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজের সঙ্গে। লায়লা আফরোজ বিষয়টি ফোনে তার স্বামীকে জানাতে চেষ্টা করলে পেছন থেকে ছুরি মারে আয়েশা। এ সময় ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে লায়লা আফরোজকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে সে। মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে ওঠা নাফিসা এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে আয়েশা। নাফিসা ইন্টারকমে গার্ডকে ফোন দিতে চাইলে আয়েশা ইন্টারকমের তার ছিঁড়ে ফেলে। আয়েশার ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দুজনেরই মৃত্যু হয়।

ডিএমপির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঘটনার পর নিজের রক্তমাখা কাপড় বদল করে আয়েশা। এরপর নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। ব্যাকপ্যাকে নেয় ল্যাপটপ ও ফোন। ঢাকা ছাড়ার সময় সিংগাইর ব্রিজ থেকে ফোন ও পোশাকভর্তি ব্যাগ নদীতে ফেলে দেয় সে।

এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল বলেন, আয়েশার আগে থেকেই চুরির স্বভাব রয়েছে। এমনকি নিজের বোনের বাড়ি থেকেও ২ লাখ টাকা ও ৪ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করেছিল সে। এর আগে হুমায়ুন রোডে চুরির ঘটনায় থানা পুলিশ তাকে আটক করেছিল।

এ সময় অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, দেশবাসী তথা ঢাকাবাসীর উদ্দেশ্যে ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে অনুরোধ, আপনারা যারা বাসায় গৃহকর্মী রাখেন তারা তাদের পরিচয় নিশ্চিত হবেন। আপনার বাসায় কাজ করা ব্যক্তির পরিচয়পত্র ও তাকে শনাক্তকারী ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করে রাখবেন। কারণ, আপনি বাসার গৃহকর্মীর বানানো খাবার খান, আপনার বেড রুমে গৃহকর্মী প্রবেশ করে। এখানে আপনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয় জড়িত।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইবনে মিজান, মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন, মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মেজবাহ উদ্দিন, পরিদর্শক (তদন্ত) রকিব উজ্জামান, এসআই আক্কেল আলী ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শহিদুল ওসমান মাসুম।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন