Logo
Logo
×

রাজধানী

মা-মেয়েকে হত্যার পর স্কুল ড্রেসে বেরিয়ে যায় আয়েশা

Icon

অনলাইন ডেস্ক :

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫১ পিএম

মা-মেয়েকে হত্যার পর স্কুল ড্রেসে বেরিয়ে যায় আয়েশা

ছবি : সংগৃহীত

সকালে হাসি মুখে বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যান স্কুল শিক্ষক এ জেড আজিজুল ইসলাম। বেলা ১১টার দিকে বাসায় ফিরে দেখেন স্ত্রী ও মেয়ের কোনো সাড়া শব্দ নেই। নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা খুলতেই সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যায় আজিজুলের। ফ্ল্যাটের ড্রয়িংরুম, করিডোরের ফ্লোর রক্তে ভেজা। দরজার পাশেই গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে আছে মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)।

ছোপ ছোপ রক্তের দাগ রান্নাঘর পর্যন্ত গেছে। আজিজুল রান্নাঘর লাগোয়া করিডোরে গিয়ে দেখতে পান স্ত্রী লায়লা আফরোজের (৪৮) রক্তাক্ত মরদেহ। প্রতিবেশীদের সহায়তায় গুরুতর আহত মেয়ে নাফিসাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। তাদেরকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

সোমবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোড়ের ৩২/২/এ নম্বর বাসার সপ্তম তলার একটি ফ্ল্যাটে ঘটে এ নির্মম এ হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি চাকু উদ্ধার করেছে পুলিশ।

পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, বাসায় গৃহকর্মী আয়েশা (২০) এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। সোমবার সকালে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান ওই গৃহকর্মী। যাওয়ার সময় বাসা থেকে নিয়ে যান ব্যাগ ভর্তি মূল্যবান জিনিসপত্র। তাকে গ্রেফতারে অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট।

জানা গেছে, নিহত নাফিসা প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। নাফিসার বাবা এ জেড আজিজুল ইসলাম ঢাকার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন।

পুলিশ ও প্রতিবেশী সূত্রে জানা গেছে, আজিজুল ইসলাম স্কুল থেকে এসে বেলা ১১টার দিকে কলিং বাজায়। কিন্তু দীর্ঘসময় রুম না খোলায় এক্সটা চাবি দিয়ে রুম খোলেন। ঢুকতেই দেখেন তার মেয়ে দরজার পাশে মাথা দিয়ে বসে ছিল। মেয়েকে মুমূর্ষু রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে সে চিল্লাচিল্লি শুরু করেন। মেয়েকে মেডিকেলে পাঠিয়ে পরে স্ত্রীর লাশ দেখতে পান

ফ্ল্যাটটিতে ঢুকতেই ড্রয়িংডাইনিং রুম একসঙ্গে। সেখানে পুরো ফ্লোর রক্তে ভেজা। এরপরই রয়েছে লম্বা করিডর। তার সঙ্গেই রান্নাঘর। পুরো এলাকা রক্তে ভিজে আছে। ফ্ল্যাটের মুল দরজার সিটকিনিসহ আশপাশে রক্তের দাগ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে আহত অবস্থায় মেয়ে নাফিসা দরজা খোলার চেষ্টা করেছিলেন।

ডিএমপি’র তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান যুগান্তরকে বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের প্রাথমিক ধারণা গৃহকর্মীই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে রান্নাঘর থেকেই হামলা শুরু হয়েছে। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটে লেগেছে ওয়ালে। রান্না ঘরে রাখা সবজিও ভিজে গেছে রক্তে।

তিনি বলেন, কাজের মেয়েটা বাসা থেকে বের হয়ে রিকশায় ওঠে। সেই রিকশা আলাকে খুজে বের করার চেষ্টা করছি। তাকে পেলে কাজের মেয়েকে কোথায় নামিয়ে দিয়েছে তা জানা যাবে।

ওই গৃহকর্মী বাসা থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। তবে কি কি জিনিস ও কি পরিমাণ নিয়ে গেছে তা এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি উল্লেখ করে ডিসি বলেন, কাজের মেয়েকে গ্রেফতার করতে পারলে বিস্তারিত জানা যাবে।

এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্র বলছে, সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে খণ্ডকালীন (ছুটা) গৃহকর্মী আয়েশা (২০) লায়লা আফরোজকে খুন ও তার মেয়ে নাফিসাকে গুরুত্বর আহত করে পালিয়ে যায়। সকাল আনুমানিক ১১ টার সময় মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে গুরুতর আহত অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গত চারদিন ধরে ওই বাসায় কাজ করেন গৃহকর্মী আয়েশা। তার বাড়ি রংপুরে।

ডিএমপির ডিবি তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ রাকিব খান যুগান্তরকে বলেন, কাজে যোগ দেওয়ার মাত্র চার দিনের মাথায় কেন সে (আয়েশা) হত্যা করল এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। আমাদের একাধিক টিম গ্রেফতার অভিযানে নেমেছে।

সোমবার দুপুরে সরেজমিনে মোহাম্মদপুরে ওই বাসায় গিয়ে দেখা গেছে বাসার সামনের সড়কে উৎসুক জনতার ভিড়। ১৩ তলা ভবনের সপ্তম তলাতে ঘটে হত্যাকাণ্ড। সেখানে নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্বে থাকা ইসমাইল হোসেন যুগান্তরকে জানান, তারা মোট তিনজন পালাবদল করে গেইটে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। সোমবার সকাল ৬টা ২০ মিনিটের দিকে তিনি ডিউটিতে আসেন। প্রতিদিন সকাল সাতটার দিকে অফিসে যান আজিজুল ইসলাম। গৃহকর্মী আয়েশা সকাল সাতটা ১৩ মিনিটের দিকে ওই বাসায় ঢোকে আর বের হয় ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে। বের হওয়ার সময় স্কুল ড্রেস পরা ও কাধে ব্যাগ ছিল। বের হওয়ার সময় নিরাপত্তা প্রহরীদেরকে- নিজেকে মেহমান বলে পরিচয় দেন গৃহকর্মী আয়েশা।

তিনি আরও জানান, গৃহকর্মী আয়েশাকে আজিজুলের বাসায় কাজের জন্য চারদিন আগে ঠিক করে দেয় বাসার আরেক নিরাপত্তা প্রহরী খালেক। ওই গৃহকর্মী কাজের জন্য বাসার সামনে আসলে খালেক তাকে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে পরিচয় করিয়ে দেয়। খালেককে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

মোহাম্মদপুর

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন