Logo
Logo
×

রাজধানী

মোহাম্মদপুর–আদাবরে অপরাধ সাম্রাজ্য

দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর ছায়ায় ১৭ গ্রুপের দৌরাত্ম্য

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৩ পিএম

দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর ছায়ায় ১৭ গ্রুপের দৌরাত্ম্য

রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, জমি–ফ্ল্যাট দখল, মাদক কারবার, অস্ত্রের মহড়া ও মারধর—সব মিলিয়ে চলছে অপরাধের রাজত্ব। এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে ১৭টি গ্রুপ, যাদের নেতৃত্বে আছেন সমান সংখ্যক প্রভাবশালী সন্ত্রাসী–অপরাধী। পুলিশ, র‍্যাব ও যৌথ বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এই ১৭ জনের সবাই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং তাঁরা দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী—ইমামুল হাসান ওরফে *পিচ্চি হেলাল* এবং ইমন—এর নির্দেশনায় অপরাধ নেটওয়ার্ক চালান।

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এলাকাবাসী। এমনকি কয়েকটি এলাকায় স্থানীয়ভাবে গঠিত টহল দলের বিরুদ্ধেও মারধর ও ভয়ভীতির অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশের দাবি, আগের তুলনায় অপরাধের হার কমেছে। তারা বলছে, অপরাধীরা ধরা পড়লেও জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় অপরাধে জড়াচ্ছে।

প্রতিদিন ৮–৯টি ছিনতাই

মোহাম্মদপুর ও আদাবরে প্রতিদিন গড়ে ৮–৯টি ছিনতাইয়ের অভিযোগ আসে। তবে ঝামেলার আশঙ্কায় অধিকাংশ ভুক্তভোগী মামলা করেন না। ছিনতাই হচ্ছে দিনরাতজুড়ে বিভিন্ন স্থানে। গত ১৩ মাসে খুন হয়েছেন ১৮ জন। মাদক কারবারিদের সংঘর্ষেই জেনেভা ক্যাম্পে ৯ মাসে নিহত হয়েছেন আটজন।

পুলিশ জানায়, মাঠপর্যায়ে ‘কিশোর গ্যাং’ ও ছিনতাইকারীরা কাজ করলেও নিয়ন্ত্রণে থাকে এই ১৭ জনের হাতে। তাঁদের মধ্যে চারজন এক রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনের পদে ছিলেন, পরে অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে বহিষ্কৃত হন। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ৫ থেকে ৩০টি পর্যন্ত মামলা আছে—হত্যা, অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে। দুজন এখন কারাগারে, বাকিরা আত্মগোপনে।

ছিনতাইয়ের নতুন ঘাঁটি বেড়িবাঁধ ঘিরে

গাবতলী স্লুইসগেট থেকে হাজারীবাগ পর্যন্ত বেড়িবাঁধের উভয় পাশে ৮টি নতুন হাউজিং এলাকা—সুনিবিড়, তুরাগ, নবীনগর, ঢাকা উদ্যান (ওয়াকওয়ে), চন্দ্রিমা মডেল টাউন, চাঁদ উদ্যান, নবোদয় ও স্বপ্নধারা—ছিনতাইয়ের নতুন ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। এসব এলাকায় থানা দূরে হওয়ায় অপরাধীরা ঘটনাস্থল ছাড়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই।

সবচেয়ে বেশি ছিনতাই হয় ১১টি স্পটে, এর মধ্যে রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী এলাকা, বছিলা ফুটপাত, নবীনগর হাউজিং, ঢাকা উদ্যান ওয়াকওয়ে ও জেনেভা ক্যাম্প উল্লেখযোগ্য।

১৩ মাসে ১৮ খুন

গত ১৩ মাসে মোহাম্মদপুর, আদাবর ও দারুসসালাম এলাকায় অন্তত ১৮ জন খুন হয়েছেন—এর মধ্যে মাদক কারবারিদের দ্বন্দ্বে পাঁচজন, তথাকথিত ‘গণপিটুনিতে’ ছয়জন নিহত হন। সম্প্রতি আদাবরে রিপন সরদার নামে এক চা-দোকানিকে প্রতিদ্বন্দ্বী মাদকচক্র কুপিয়ে হত্যা করে।

জেনেভা ক্যাম্পে বুনিয়া সোহেল ও চুয়া সেলিমের দুই পক্ষের মধ্যে গত ৯ মাসে ১৯ বার সংঘর্ষ হয়েছে, নিহত আটজন। পুলিশ ও ডিবি অভিযান চালিয়ে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করলেও সংঘর্ষ ও মাদক ব্যবসা থামেনি।

‘গণপিটুনির’ নামে পরিকল্পিত হত্যা

চলতি বছরের মে থেকে এখন পর্যন্ত দারুসসালাম, আদাবর ও মোহাম্মদপুরে তথাকথিত গণপিটুনিতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। তদন্তে দেখা গেছে, এগুলো আসলে পরিকল্পিত হত্যা। নিহতদের মধ্যে মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের ছাত্র ইয়ামিন এবং নবীনগর হাউজিংয়ের সুজন ও হানিফ রয়েছেন।

স্থানীয় নিরাপত্তা টহল দলের সদস্যদের বিরুদ্ধেও মারধর ও অন্যায় আটকানোর অভিযোগ উঠেছে। নবীনগর হাউজিংয়ের ১২–১৬ নম্বর সড়কজুড়ে বিএনপির সহ–ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে টহল দল কাজ করছে; এলাকাবাসীর দাবি, এই দলের কয়েকজন সদস্যই ছিনতাই ও মাদক কারবারে জড়িত।

চাঁদা না দিলে গুলি

গত ২৪ মার্চ রাতে মোহাম্মদপুরের শের শাহ সুরি রোডে আবাসন ব্যবসায়ী মনির আহমেদের অফিসে গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। এর আগে বিদেশি নম্বর থেকে ‘ক্যাপ্টেন’ পরিচয়ে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। পরে ডিবি ও সেনা অভিযানে দুজন গ্রেপ্তার হয়। তদন্তে উঠে আসে, ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন বহিষ্কৃত যুবদল নেতা জাহিদ হোসেন মোড়ল—তিনি পিচ্চি হেলালের অনুসারী।

পুলিশের দাবি: অপরাধ কমেছে

ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. ইবনে মিজান বলেন, মোহাম্মদপুর বড় এলাকা, এখানে জেনেভা ক্যাম্প ও বস্তি বেশি। কিছু ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। অপরাধের হার এখন আগের তুলনায় কমে এসেছে—এ প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন