শেকৃবিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৩ নেতাকে পুলিশে দিল শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৪৩ এএম
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান নেতারা আবাসিক হলে অবস্থান করছেন। ক্যাম্পাসে অবস্থানকালে তারা বিভিন্ন ধরনের নাশকতার পরিকল্পনাও করছেন এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার (৩০ জুলাই) রাতে তিন ছাত্রলীগ নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহায়তায় আটক করেছে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ।
তবে পরবর্তীতে আটক হিসেবে দুজনকে দেখানো হয় এবং একজনকে বিশেষ সুপারিশে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
ছাত্রদলের নেতারা মূলত বলছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বাংলাদেশে আবারও অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ অবস্থায় নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ বেশ কিছুদিন যাবৎ গুপ্ত নাশকতার পরিকল্পনা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) ছাত্রলীগের নেতা পরশের নেতৃত্বে একটি গুপ্ত পরিকল্পনার ছক ফাঁস হলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের তিন নেতাকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহায়তায় পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নেতা শরিফ জানান, আগস্ট মাসকে ঘিরে দেশব্যাপী অরাজকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ছাত্রলীগ ও ফ্যাসিস্টদের কিছু নেতাকর্মী নিয়মিত জুম মিটিং করছে। পলাতক অনেকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে উঠেছে এবং হলে অবস্থানকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেটের চায়ের দোকানে নিয়মিত আড্ডা দেয় এবং ঢাকায় কোনো গোপন কর্মসূচি থাকলে হলে এসে অবস্থান করে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কয়েকদিন তাদের পর্যবেক্ষণ করি এবং বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহের মধ্যে দিয়ে নিশ্চিত হই যে তারা একত্রিত হচ্ছে এবং কিছু একটা করার পরিকল্পনা করছে। এরপর সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের রুমে যাই এবং প্রক্টরকে ফোন করি। কিন্তু তিনি আসতে রাজি হননি। পরে বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হয় এবং সন্দেহভাজনদের পুলিশের জিম্মায় দেওয়া হয়।
আটক হওয়া ছাত্রলীগ নেতারা হলেন মীর আসাদ আল রহমান সায়েম, তৌফিক ই মওলা ও আল সাদি পিয়াল। তবে পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় আটক হওয়া তিনজন ছাত্রলীগ নেতার মধ্যে আল সাদি পিয়ালকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
আটকের পরে ছাড়া পাওয়া ছাত্রলীগ নেতা আল সাদি পিয়াল যুবদল নেতা কৃষিবিদ কে এম সানোয়ার আলমের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করছিল বলে সানোয়ারের জবানবন্দিতে জানা যায়।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের সহায়তায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে থাকছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।
আল সাদি পিয়াল ছাড়া পাওয়ার বিষয়ে শেকৃবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, আমরাও ছাত্রলীগ নেতা ছাড়া পাওয়ার সঙ্গে যুবদল নেতা সানোয়ার ভাইয়ের সহযোগিতার গুঞ্জন শুনেছি, যা আমাদের কাছে অসত্য মনে হয়েছে। তবে সত্য হলে এটা করা ঠিক হয়নি বলেই আমাদের মত। কেননা সানোয়ার ভাই নিজেও দুঃসময়ের কর্মী, তিনি কোনো ছাত্রলীগ কমীকে আশ্রয় দেবেন তা মেনে নেওয়া যায় না। তবে আমি ছাত্রলীগ নেতা ছাড়া পাওয়ার মূল দায় পুলিশকে দিতে চাই।
পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছাত্রদল নেতা শরিফ বলেন, আমরা মূলত তিনজনকে পুলিশে সোপর্দ করলেও পরবর্তীতে দুজনকে আটক দেখানো হয়েছে। কীভাবে একজন ছাড়া পেল তা আমরা অবগত নই।
এ বিষয়ে যুবদল নেতা সানোয়ার বলেন, আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। আমার সঙ্গে কোনো যোগসূত্র নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা পিয়ালের থাকার কথা না। সেখানে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়ানোর কথা তো দূরের বিষয়। এছাড়া ছাত্রলীগ নেতা পিয়ালের আমার বিরুদ্ধে যে জবানবন্দির ভিডিও এসেছে তা জোরপূর্বক কিংবা যড়যন্ত্রমূলকভাবে হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে প্রকৃত সত্য বের হবে।
এ বিষয়ে শেরেবাংলানগর থানার অসি মোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের পোস্টধারী দুইজন নেতাকে শেকৃবি ক্যাম্পাসের ছাত্রদল নেতা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের হাতে তুলে দেয়। তদের বিরুদ্ধে মূলত বিভিন্ন ঝটিকা মিছিল এবং অপতৎপরতার অভিযোগ রয়েছে যা বর্তমানে তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে।



