
প্রিন্ট: ২৯ মার্চ ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম
রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ১০০ কোটি ডলার চাইল জাতিসংঘ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১০:১৫ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য প্রায় ১০০ কোটি ডলার সহায়তা আহ্বান করেছে জাতিসংঘ। শুক্রবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় এই অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ‘২০২৫-২৬ জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান’ নামক এক সমন্বিত কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য ও মানবিক সহায়তা দিতে ৯৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার প্রয়োজন হবে।
জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে বর্তমানে ১৪ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছেন, যারা প্রায় আট বছর ধরে বাস্তুচ্যুত অবস্থায় রয়েছেন। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সংকট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আগের মতো আলোচনার কেন্দ্রে নেই, তবে বাস্তবতা হলো, তাদের দুর্দশার কোনো সমাধান হয়নি।”
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “এই শরণার্থীরা এখনও খাদ্য, আশ্রয়, পোশাক এবং রান্নার জ্বালানির জন্য বহির্বিশ্বের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। যদি সহায়তা কমে যায়, তবে শিবিরগুলোতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে।”
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) দেশটির পুলিশ স্টেশন ও সেনা ছাউনিতে হামলা চালায়। এর প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন শুরু করে। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের শিকার হয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে কক্সবাজারের কুতুপালংসহ বিভিন্ন এলাকায় শরণার্থী শিবিরে তাদের আশ্রয় দেয়। পরবর্তীতে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের খাদ্য ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা প্রদান শুরু করে। বর্তমানে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে ১৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে।
শুরুর দিকে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা দিলেও পরবর্তীতে জাতিসংঘ এই দায়িত্ব নেয়। বর্তমানে শরণার্থীদের খাদ্য সহায়তা পরিচালনা করছে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)। এ সংস্থার অর্থায়নের বড় অংশ আসত যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড থেকে, যা ডব্লিউএফপির মোট বাজেটের ৮০ শতাংশ জোগান দিত।
তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিদেশি সহায়তা স্থগিত করায় ইউএসএইডের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আরও প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যতদিন পর্যন্ত রাখাইনের পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হয় এবং রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ তৈরি না হয়, ততদিন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা।”
সূত্র : এএফপি