
প্রিন্ট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম
ইউরোপ-আমেরিকার মধ্যে ভারসাম্য করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৭ পিএম

মানচিত্রে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দীর্ঘদিনের কৌশলগত অংশীদারত্বে চিড় ধরেছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে শুরু হওয়া বাণিজ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক মতপার্থক্য এখন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, শুল্কনীতি, ও কৌশলগত নিরাপত্তা নিয়ে দুই অঞ্চলের ভিন্ন অবস্থান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে— যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে।
বাংলাদেশ এখন এই পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারসাম্য বজায় রাখতে কূটনৈতিকভাবে আরও সচেতনভাবে অগ্রসর হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ এখন আর এক জায়গায় নেই। বিভাজন দেখা দিয়েছে বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতি— সব দিকেই।
তিনি বলেন, আগে শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করলেই হতো, এখন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও রাশিয়ার মধ্যেও একই ভারসাম্য বজায় রাখতে হচ্ছে।
কেন এই বিভাজন?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের হুমকি মোকাবিলায় গঠিত ন্যাটোর মাধ্যমে ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেইসঙ্গে বাণিজ্য সুবিধাও পেয়েছিল ইউরোপ। কিন্তু ট্রাম্পের আমলে লেনদেন নির্ভর পররাষ্ট্রনীতির কারণে এই সম্পর্ক ক্রমেই জটিল হয়ে ওঠে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ইউরোপের বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপকে নিজের নিরাপত্তার খরচ বহনের জন্য চাপ সৃষ্টি করে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একক কৌশল থেকেও ইউরোপ দূরে রয়েছে।
বাংলাদেশের ভারসাম্য কৌশল
সম্প্রতি জাতিসংঘে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ আলাদা দুটি প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সমর্থন দিলেও ইউরোপের প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, দুই পক্ষই আমাদের সমর্থন চেয়েছিল। সব দিক বিবেচনায় আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে হ্যাঁ ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। ইউরোপকে আমাদের সীমাবদ্ধতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের কূটনৈতিক কৌশল হচ্ছে কোনো পক্ষকেই ক্ষুণ্ন না করে ভারসাম্য রক্ষা করা, যাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঠিক থাকে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ?
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। পাশাপাশি এই অঞ্চলগুলো থেকে আসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহযোগিতা ও রেমিট্যান্স। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায়, এই দুটি অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা ইলন মাস্কের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে।
তিনি যোগ করেন, এখনো এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে একপক্ষকে সমর্থন দিলে আরেক পক্ষের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে। সরকার পরিস্থিতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।