
প্রিন্ট: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩১ এএম
আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রয়োজন: পরিবেশ উপদেষ্টা

মোরছালীন বাবলা
প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৫, ০৫:২১ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিনি জানান, বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে, যা শুধুমাত্র রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে নয়, বাস্তব পদক্ষেপ ও সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধান করা জরুরি। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর কাঠমান্ডু রোডম্যাপসহ বিভিন্ন সমঝোতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার ভোরে কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকাস্থ নিজ বাসভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশের বায়ুদূষণ পরিস্থিতি, বিশেষ করে ঢাকার ভয়াবহ অবস্থার কথা তুলে ধরেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশের বহুমুখী বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ু মান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। নতুন আইনি কাঠামোর মাধ্যমে দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ু মান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিলম্বিত হলেও বর্তমানে তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য মানুষের দূষণজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো এবং পরিষ্কার বায়ুর দিন বৃদ্ধি করা।
বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্পও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা সরকারের অনুমোদনের পর দ্রুত বাস্তবায়ন শুরু হবে। প্রকল্পের মাধ্যমে দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধি করা এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
তিনি জানান, ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোকে ইটভাটামুক্ত হিসেবে ঘোষণা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যেখানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে। পাশাপাশি, ২০২৫ সালের মে মাস থেকে পুরনো বাস ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে, যা পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধুলাবালি দূষণ রোধে ঢাকার খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং রাস্তা পরিষ্কারে আরও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযান ইতোমধ্যে বায়ুর মান উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে, তবে এই অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি ও শিল্প খাতের আধুনিকায়ন প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা যায় এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। এ সংকট ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি, তাই এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
পরিবেশ উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, "আমি বিশ্বাস করি, বায়ুদূষণ রোধ সম্ভব। আমাদের হাতে প্রযুক্তি ও বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে, শুধু প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন দরকার। এটি শুধু পরিবেশগত নয়, মানবিক সংকটও বটে।"
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক সংস্থা, গবেষক, স্থানীয় প্রশাসন, পরিবহন ও শিল্পখাতের বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।