
প্রিন্ট: ২৭ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪৪ এএম
পদ্মা অয়েলের একক নিয়ন্ত্রণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশীয় এয়ারলাইন্স

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৯ এএম

ছবি : সংগৃহীত
দেশের বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো জেট ফুয়েলের জন্য একমাত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েলের ওপর নির্ভরশীল থাকায় বিপাকে পড়েছে। এ কারণে বিমান সংস্থাগুলো বিকল্প সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পারটেক্স পেট্রো ও ইস্টার্ন রিফাইনারির মতো দেশীয় কোম্পানিগুলোকে সুযোগ দেওয়ার দাবি তুলেছে।
রবিবার (২৩ মার্চ) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আয়োজিত ‘জেট ফুয়েলের মূল্য নির্ধারণ’ শীর্ষক গণশুনানিতে এ বিষয়টি উঠে আসে।
গণশুনানিতে এওএবির (এয়ারলাইন্স অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান, এয়ার অ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ ও ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার হাবিবুর রহমান আকন্দ।
নভোএয়ারের এমডি মফিজুর রহমান বলেন, “একটি উড়োজাহাজ পরিচালনার মোট খরচের ৪০-৪৬ শতাংশই ফুয়েলের পেছনে ব্যয় হয়। অথচ আমাদের আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দামে জেট ফুয়েল কিনতে হচ্ছে, যা ব্যবসায়িকভাবে আমাদের টিকিয়ে রাখা কঠিন করে তুলছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে এখানেও বাড়ানো হয়, কিন্তু কমলে সেই হারে কমানো হয় না। তাই আমরা চাই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফুয়েলের দাম নির্ধারণ করা হোক।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে ঢাকায় প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ৭৫ সেন্ট, যেখানে ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরবে তা ৫৫-৬৩ সেন্টের মধ্যে। তেল সরবরাহে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ থাকা পদ্মা অয়েলের পরিবর্তে একাধিক বিকল্প প্রতিষ্ঠান রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে পারটেক্স রিফাইনারির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি।”
ইউএস বাংলার প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান আকন্দ বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে জেট ফুয়েলের দাম যখন ৯৫ সেন্ট ছিল, তখন আমাদের এখান থেকে লিটারপ্রতি ১১১ টাকায় কিনতে হয়েছে। এখন দাম কমে ৭৫ সেন্ট হলেও আমাদের কাছ থেকে একই মূল্য রাখা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। অথচ আমরা সম্পূর্ণ আমদানি করা ফুয়েল ব্যবহার করি, আর আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে (যেমন পারটেক্স পেট্রো ও ইস্টার্ন রিফাইনারি) তেল সরবরাহের সুযোগ দেওয়া হয় না।”
বিপিসির (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) মহাব্যবস্থাপক এ টি এম সেলিম বলেন, “পারটেক্স একবার জেট ফুয়েল সরবরাহ করেছিল, কিন্তু তাদের পণ্য গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারেনি। তাই তাদের থেকে সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।”
তবে এ নিয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, “ভারতে নিজেদের রিফাইনারিতে অপরিশোধিত তেল (ক্রুড অয়েল) পরিশোধন করে কম দামে বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি সরকার সহায়তা করত, তাহলে তারাও কম মূল্যে জেট ফুয়েল সরবরাহ করতে পারত।”
বিপিসির মহাব্যবস্থাপক আরও জানান, বিমানের কাছে এখন পর্যন্ত ১৭০০ কোটি টাকার জেট ফুয়েলের বকেয়া রয়েছে, যা ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে জমা হয়েছে। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নগদ অর্থে ফুয়েল কিনছে এবং প্রতি মাসে ১৫-২০ কোটি টাকা করে বকেয়া পরিশোধ করছে।
বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের কাজ করছি। এবার আমরা তরল জ্বালানির মূল্য নির্ধারণেও উদ্যোগ নিয়েছি। ভবিষ্যতে ফার্নেস অয়েলের মূল্য নির্ধারণ নিয়েও আলোচনা করব।”
দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে, যেন আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জেট ফুয়েলের মূল্য নির্ধারণ করা হয় এবং একাধিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বাজারে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়।