
প্রিন্ট: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০১:৩৫ পিএম
শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে কমিশন বাণিজ্যের তদন্তে দুদক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৫:০৯ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগে তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশন গ্রহণের অভিযোগ এসেছে শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ১৩০০ কোটি টাকার সরকারি কাজ পছন্দের ঠিকাদারদের দেওয়ার বিনিময়ে কমিশন নেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তদন্তে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রোববার (১৬ মার্চ) দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলে (১৯৯৬-২০০১) স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। এরপর দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মন্ত্রিত্ব না থাকলেও শেখ পরিবারের প্রভাব কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, সড়ক পরিবহনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে কমিশন বাণিজ্য চালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
দুদক জানায়, সরকারি টেন্ডারের দরপ্রস্তাব সাধারণত গোপন থাকে, তবে শেখ সেলিম নিয়মিতভাবে দরপ্রস্তাবের তথ্য সংগ্রহ করে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতেন। এর বিনিময়ে তিনি ১০-১৫ শতাংশ কমিশন গ্রহণ করতেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনানীতে শেখ সেলিমের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর উদ্ধারকৃত ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজের হিসাব সংবলিত নথি পাওয়া গেছে। এসব নথিতে গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, হবিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, নাটোর, খুলনা ও রাজশাহীর বিভিন্ন প্রকল্পের দরপত্রের তথ্য ও কমিশনের হার সংক্রান্ত সংকেত উল্লেখ ছিল বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জের ১১টি উন্নয়ন প্রকল্প ১১টি প্যাকেজে ভাগ করে নির্দিষ্ট ঠিকাদারদের দেওয়া হয়েছিল। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে:
- বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ
- বিদ্যুতের সাব-স্টেশন স্থাপন
- গ্যালারি শেড নির্মাণ
- স্টেডিয়াম সংস্কার ও উন্নয়ন
- হোস্টেল কাম অফিস ভবন নির্মাণ
- উইমেন স্পোর্টস কমপ্লেক্সে জিমনেসিয়াম স্থাপন
- স্পোর্টস কমপ্লেক্সে গ্যালারি চেয়ার স্থাপন
নথিতে উল্লেখিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে:
- বিএফএল/এইচএলসি-জে/ভি – ১২.২৩ কোটি টাকা
- কিউ এইচ মাসুদ অ্যান্ড কোং – ১১.৬০ কোটি টাকা
- মেসার্স আনাম ট্রেডার্স – ১০.২২ কোটি টাকা
- এ, এস-এ এটকো-জে/ভি – ৯.৩৪ কোটি টাকা
- মার্কেন্টাইল কর্পোরেশন – ১১.৬৭ কোটি টাকা
এছাড়া, গোপালগঞ্জের বাইরেও চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, হবিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও নাটোরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ যাচাই করতে দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধান শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দুদক সূত্র নিশ্চিত করেছে।