
প্রিন্ট: ৩০ মার্চ ২০২৫, ০৪:০৪ পিএম
আগে জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে বেশির ভাগ দল

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম

ছবি : সংগৃহীত
ন্যূনতম সংস্কার শেষে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনই অগ্রাধিকার, এরপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ২৬টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তবে আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের কোনো দল এবং জাতীয় পার্টিকে এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
বৈঠক শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, মূল উদ্দেশ্য ছিল কমিশনের কাজের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা। বৈঠককে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, যেখানে ২৭টির বেশি রাজনৈতিক দল ও জোটের শতাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ৩২ জন মতামত দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে এবং সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তারা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়াকে সমর্থন ও সহযোগিতা করবে।
প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান বৈঠকে বলেন, ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। রাজনৈতিক দল, সমাজের নাগরিক ও মানুষ হিসেবে এই সংস্কার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়া সকলের দায়িত্ব।
আলী রীয়াজ জানান, কমিশনের কাজ এখন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে ও জোটগতভাবে আলোচনা করা হবে এবং এক পর্যায়ে সকলকে একত্রিত করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরোধ অনুযায়ী, কমিশনের বিভিন্ন প্রতিবেদনের হার্ড কপি তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় কোনো দ্বিধা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, কমিশনের মেয়াদ ছয় মাস, তবে যত দ্রুত সম্ভব ঐকমত্যে পৌঁছানোর লক্ষ্য রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, যা তারা পর্যবেক্ষণ করবে। দ্রুত সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে, যাতে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তাদের প্রত্যাশা, ন্যূনতম সংস্কারের বিষয়ে দ্রুত ঐকমত্য তৈরি হবে এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অতি দ্রুত অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বিএনপি আবারও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানায় যে, জাতীয় নির্বাচন আগে অনুষ্ঠিত হতে হবে, তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন।
তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম বৈঠক করেছেন এবং সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিভিন্ন কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদন নিয়ে দলগুলো মতামত দেবে এবং ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে। আজকের বৈঠক মূলত পরিচিতিমূলক ছিল, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত ব্যক্ত করেছে, তবে কার্যকর কোনো আলোচনা এখনো হয়নি।
জামায়াতে ইসলামীও সংস্কারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। দলটির নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, কমিশন তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর দ্রুত নির্বাচন দেওয়া উচিত। তারা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করবে এবং চূড়ান্ত মতামত জানাবে।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও দলের নিবন্ধন বাতিলের দাবি জানিয়েছে। জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক সংস্কারের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে হবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আইনি পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের বিচারে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশিত নয়। যদি কোনো হস্তক্ষেপ হয়, তাহলে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ গড়ে তুলবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ হওয়া উচিত এবং কোনো দল বা মতাদর্শের প্রতি পক্ষপাত দেখানো যাবে না।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে রাজনৈতিক অগ্রাধিকার বদলে যাবে এবং নতুন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চান না।
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, সরকারের কর্তৃত্ব এখনো সুস্পষ্ট নয়। এই অবস্থায় কোনো নির্বাচন বিপজ্জনক হতে পারে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত।
বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক কমিটি, এলডিপি, এবি পার্টি, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিস, ডেমোক্রেটিক লেফট ইউনিটি, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, গণফোরাম, আমজনতার দল, লেফট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অংশ নেন।