
প্রিন্ট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৪:১৬ পিএম

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৪ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
আজ শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে। এই সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক ও কার্যকর করতে সরকার বিভিন্ন সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর ধারাবাহিকতায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় ও স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল জানান, বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন সরকারি ডকুমেন্ট সত্যায়নের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল করা হয়েছে, যা হয়রানি কমিয়ে জনগণের সময় ও অর্থের সাশ্রয় করছে। এছাড়া, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে করা ‘গায়েবি’ মামলা চিহ্নিত করে সেগুলো প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশ
গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানের নেতৃত্বে কমিশন ২৮টি সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ ও শৃঙ্খলাবিষয়ক প্রস্তাব অন্যতম।
বিচারব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইজেশন
ই-কোর্ট ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিস: মডেল ই-কোর্ট এবং মডেল সাব-রেজিস্ট্রি অফিস চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যেখানে মামলা পরিচালনা থেকে রায় ঘোষণার পুরো প্রক্রিয়া ভার্চুয়ালি সম্পন্ন হবে।
ই-ফাইলিং: উচ্চ আদালতে ই-ফাইলিং চালু করা হয়েছে।
আইন সংশোধন: দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট আইনের যুগোপযোগী সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিচারক ও আইন কর্মকর্তাদের নিয়োগ
- সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৫ জন, হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ জন এবং অধস্তন আদালতে ১০৯ জন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
- সুপ্রিম কোর্টে ২৩৯ জন এবং অধস্তন আদালতে ৪ হাজার আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার ও বিচার বিভাগীয় সম্পদ বিবরণী
- ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে করা প্রায় সব ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
- বিচারক, রেজিস্ট্রেশন বিভাগের কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম
- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনকালে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া চলছে।
- এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে এবং ১১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, যার মধ্যে ৩৫ জন কারাগারে রয়েছেন।
- ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হয়েছে এবং তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন দল পুনর্গঠন করা হয়েছে।
সাবেক সরকারের পতন ও বিচার কার্যক্রম
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন, যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলছে।
সরকারের এই সংস্কার ও বিচার কার্যক্রম দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।