কোটাবিরোধী আন্দোলন : সকাল-সন্ধ্যা ‘ব্লকেড’ আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৪, ০৯:২১ এএম
কোটাবিরোধী আন্দোলন। ফাইল ফটো
সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটা বাতিলের দাবিতে আজ সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে এক দফা দাবিতে এই কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এদিকে কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর করা আবেদন আজ আপিল বিভাগে শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে কোটাবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘২০১৮ সালের পরিপত্র যদি ফিরে আসে, সেক্ষেত্রে কোটা নিয়ে আবার ঝামেলা হতে পারে। তাই আমরা সরকার ও নির্বাহী বিভাগের কাছে সম্পূর্ণ সমাধান চাই। আমাদের বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামীকাল থেকে সকাল-সন্ধ্যা সারা দেশে অবরোধ চলবে। সড়ক ও রেলপথ এ অবরোধের আওতায় থাকবে। সাংবাদিক ও জরুরি সেবার পরিবহনগুলো ব্লকেড কর্মসূচির আওতায়মুক্ত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘চার দফা নয়, আমাদের এখন দাবি একটা। তা হলোÑ সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করতে হবে।’
সারা দেশের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের সারা দেশের প্রতিনিধিরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অবরোধ করবেন।’
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘যদি সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে কমিশন গঠনের মাধ্যমে আমাদের দাবি মেনে নেয়, সেক্ষেত্রেই আমরা রাজপথ ছেড়ে ক্লাসরুমে ফিরে যাব।’
সকালে দুই শিক্ষার্থীর দায়ের করা রিটের বিষয়ে সমন্বয়ক বলেন, ‘এটি আমাদের আন্দোলনের কোনো অংশ নয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, নিজেদের ব্যক্তিগত আগ্রহের জায়গা থেকে এই রিট করেছেন। তবে আমরা তাদের এই রিট সমর্থন করছি।’
ন্যূনতম কোটা কত শতাংশ রাখা যায়- এমন প্রশ্নে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি কোটা শুধু প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। আমরা ৫ পার্সেন্ট কোটা যৌক্তিক বলে বিবেচনা করছি। আমাদের মূল দাবি হলো নির্বাহী বিভাগের কাছে।’
প্রসঙ্গত, ৫ জুন সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (নবম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত। ওই দিন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী আন্দোলনে নামেন। গত রবি ও সোমবার শিক্ষার্থীরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন। এতে সড়ক-মহাসড়ক যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় আদালতের ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে।
রায়ের বিরুদ্ধে আবেদনের আপিল বিভাগে শুনানি আজ
কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আবেদন আপিল বিভাগে শুনানি হবে আজ। গতকাল মঙ্গলবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম এ আদেশ দেন। এর আগে ওই দিন সকালে আবেদন দায়ের করার জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হলফনামা করার অনুমতি দেন।
ওই দুই শিক্ষার্থী হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া ও উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান। তাদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
রাজপথে আন্দোলন করে কোটা সমস্যা নিরসন হবে না : আইনমন্ত্রী
রাজপথে আন্দোলন করে কোটা সমস্যা নিরসন হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে তিনি বলেছেন, ‘রাজপথে আন্দোলন করে কোটা সমস্যা নিরসন হবে না। এভাবে আন্দোলন করলে একপর্যায়ে হয়তো আদালত অবমাননাও হয়ে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘তারা যদি পক্ষভুক্ত হয়ে তাদের বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করেন, তবে আপিল বিভাগ সব পক্ষের কথা শুনে একটা ন্যায়বিচার করবেন। এটাই আমাদের আশা এবং আমার মনে হয় সেটাই।’
কোটা তুলে দেওয়ায় নারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পিছিয়ে পড়ছে : শিক্ষামন্ত্রী
সরকারি চাকরিতে কোটা একেবারেই তুলে দেওয়ার কারণে নারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পিছিয়ে পড়ছে বলেও মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। গতকাল এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতে আগামীকাল (আজ) এ বিষয়ে একটি শুনানি হবে। সেখান থেকে একটি সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা আছে। বিচারাধীন বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
চট্টগ্রামে লংমার্চ
চট্টগ্রাম নগরীতে বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী লংমার্চ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের লংমার্চ ও অবরোধের কারণে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয় নগরীজুড়ে। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ৪টা ২০ পর্যন্ত ষোলশহর স্টেশনে রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই অবরোধে ষোলশহরের অদূরে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী ট্রেনটি আটকা পড়ে।
কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ রাশেল আহমেদ বলেন, ‘কোটা বাতিলের দাবিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আমরা অবরোধ করেছি। আমাদের ধারাবাহিক আন্দোলন চলমান থাকবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথেই থাকব। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।’
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছে চট্টগ্রাম অফিস)