
প্রিন্ট: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৬ পিএম
সত্য প্রকাশই হোক গণমাধ্যমের মূল অঙ্গীকার : কাদের গনি চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, “সত্য প্রকাশই হতে হবে গণমাধ্যমের একমাত্র অঙ্গীকার।” তিনি বলেন, গত ১৬ বছর ধরে গণমাধ্যম সত্য তুলে ধরতে পারেনি। তবে এখন ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে, ফলে আর কোনো বাধা নেই সত্য লেখার ক্ষেত্রে। এখন দরকার সাংবাদিকদের মানসিকতার পরিবর্তন।
রবিবার (৬ এপ্রিল) কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। সভায় সভাপতিত্ব করেন সাংবাদিক কামাল হোসেন আজাদ। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক নুরুল ইসলাম হেলালি, এসএম আমিনুল হক চৌধুরী, আতাহার ইকবাল, মমতাজ উদ্দিন বাহারি, আবু সিদ্দিক ওসমানি, শামসুল হক শারক ও এম আর মাহবুব। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এসএম জাফর।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকতা মানেই সত্যের সাধনা। এই পেশা কোনো মিথ্যার সঙ্গে আপস করে না। যেমন শতভাগ না পেলে কেউ দেশপ্রেমিক হতে পারে না, তেমনি শতভাগ সত্য ছাড়া কোনো সংবাদও সম্পূর্ণ হয় না। সাংবাদিকদের দায়িত্ব হলো সত্য উদঘাটন ও তা বিকশিত করা। আত্মসচেতন হয়ে পেশাগত দায়িত্ব ও নীতিমালা মেনে চলার মাধ্যমেই সাংবাদিকরা জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকতা শুধু তথ্য সংগ্রহের পেশা নয়, এটি তথ্য যাচাইয়ের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। তথ্যের সত্যতা যাচাই বা ‘ভেরিফিকেশন’ হচ্ছে এই পেশার মূল স্তম্ভ, যা বিল কোভাচ ও টম রোসেনস্টিয়েল তাদের বিখ্যাত গ্রন্থ The Elements of Journalism-এ উল্লেখ করেছেন।
সাংবাদিকদের পেশাগত ঝুঁকি নিয়েও কথা বলেন কাদের গনি চৌধুরী। তিনি বলেন, “সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের চাকরি, এমনকি জীবন হুমকির মুখে পড়ে। কিন্তু এই ঝুঁকি যদি নেওয়া না হয়, তাহলে সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে কীভাবে? অতীতে অনেক সাংবাদিক আত্মসমর্পণ করেছেন সেল্ফ-সেন্সরশিপের মাধ্যমে, যা কখনোই কাম্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, সত্য প্রকাশে বাধা এলেও সাধারণ মানুষ সবসময় সাংবাদিকদের পাশে থাকে। এই পেশায় যুক্ত সকলের, সম্পাদক থেকে প্রতিবেদক পর্যন্ত, কিছু মৌলিক দায়িত্ব রয়েছে। দায়িত্ব ও নৈতিকতা ছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় না।
কাদের গনি চৌধুরী সাংবাদিকতাকে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধুনিক পেশা হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “এই পেশা কখনো মূর্খজনের হতে পারে না। একজন সাংবাদিককে হতে হয় অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যতের মাঝে সংযোগ স্থাপনকারী, যিনি মেধা, ভাষা ও বিশ্লেষণে দক্ষ হবেন।”
তিনি বলেন, “যে সমাজ মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে না, সে সমাজে স্বাধীন সাংবাদিকতা গড়ে ওঠে না। সাহসী ও বুদ্ধিবৃত্তিক সাংবাদিকতার ভিত্তি গড়ে তুলতে হলে আমাদের চিন্তার অবকাশ ও বিবেকের জায়গাটি মুক্ত রাখতে হবে।”
অবশেষে তিনি বলেন, “আমরা অনেক সময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলি, কিন্তু দায়িত্ব ও নৈতিকতার প্রসঙ্গ তেমনভাবে তুলে ধরি না। অথচ তথ্য জানানোর মাধ্যমে মানুষকে সচেতন, শিক্ষিত ও উদ্বুদ্ধ করাই গণমাধ্যমের মূল দায়িত্ব।”