
প্রিন্ট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৪ পিএম
শ্রমের বিনিময়ে নয়, খড়ের বিনিময়ে ধান কাটছেন কৃষকরা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৩ এএম

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার পানান বিলে খড়ের বিনিময়ে ধান কাটা উৎসব চলছে। ছবি : সংগৃহীত
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার পানান বিলে শুরু হয়েছে ব্যতিক্রমী এক ধান কাটার উৎসব—যার নাম দিয়েছে স্থানীয় কৃষকরা ‘খড় উৎসব’। এই উৎসবে কৃষকরা পারিশ্রমিক নিচ্ছেন না অর্থ বা খাদ্য হিসেবে, বরং বিনিময়ে নিচ্ছেন গরুর খাদ্য ‘খড়’।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া এ উৎসবে ধান কাটছেন আশপাশের গ্রামের কৃষকরা, যাদের নিজস্ব জমির ধান পাকতে এখনও সময় লাগবে। এদিকে তাদের গরুর খাদ্যের সংকট দেখা দেওয়ায় তারা আগেভাগে পেকে যাওয়া জমির ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন খড়। এতে জমির মালিকরাও শ্রমিক খরচ বাঁচিয়ে লাভবান হচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষক রাসেল মিয়া ও রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের বাড়িতে খড়ের তীব্র সংকট। নিজের ধান পাকতে সময় লাগবে আরও দুই সপ্তাহ। বাজারেও খড় মিলছে না। এমন অবস্থায় পানান বিলে কৃষক হারুন মিয়ার ধান আগেভাগে পেকে যাওয়ায় তারা সেখানে গিয়ে খড়ের বিনিময়ে ধান কাটছেন।
হারুন মিয়া জানান, তার প্রায় একশ শতাংশ জমির ধান কাটতে ৩০-৪০ জন কৃষক এগিয়ে এসেছেন। এতে তার প্রায় ১০ হাজার টাকা শ্রমিক খরচ বেঁচেছে। আর অন্য কৃষকরাও পেয়েছেন প্রয়োজনীয় খড়।
সরেজমিনে পানান বিলে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকেই দলবদ্ধভাবে কৃষকরা ধান কাটা, মাড়াই ও খড় সংগ্রহে ব্যস্ত। কেউ সাইকেলে, কেউ মাথায় করে খড়ের মুঠি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। তারা কেউই পেশাদার শ্রমিক নন—সবারই নিজের ধানি জমি রয়েছে। কিন্তু খড়ের অভাবে তারা এ উৎসবে অংশ নিচ্ছেন।
কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, আমার বাড়িতে গরুর খড় শেষ। নিজের ধান কাটতে সময় লাগবে আরও ১০-১৫ দিন। তাই এসেছি এখানে ধান কাটতে, আর খড় নিতে।
আরেক কৃষক খুরশিদ মিয়া জানান, বাজারে খড়ের দাম বেশি। তাই প্রথম যার ধান পাকে, সবাই মিলে বিনা পয়সায় তার ধান কেটে দেই। আজ আমি ২০ মুঠির মতো খড় বাড়ি নিয়ে গেছি।
স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল হাই বলেন, পানান বিলে বোরো মৌসুমের শুরুতেই এই খড় উৎসব হয়ে থাকে। এটা আমাদের কৃষকদের সহযোগিতার এক দারুণ উদাহরণ।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাদিকুর রহমান বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। খড় উৎসব কৃষকদের মধ্যে একধরনের সৌহার্দ্যের সৃষ্টি করেছে। আশা করছি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার বাম্পার ফলন হবে।
তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে জেলার ১৩ উপজেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এতে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাত লাখ ৮৮ হাজার ৯১২ টন।
সবশেষে তিনি বলেন, বোরো মৌসুমের শেষ পর্যন্ত যেন কৃষকের মুখে হাসি থাকে—সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।