
প্রিন্ট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৩ পিএম
লাঙ্গলবন্দকে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরের ঘোষণা জেলা প্রশাসকের

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৬ এএম

লাঙ্গলবন্দের পুণ্যস্নান অনুষ্ঠানে নারায়গঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। ছবি : যুগেরচিন্তা২৪
নারায়ণগঞ্জের ঐতিহাসিক লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাষ্টমী পুণ্যস্নানকে ঘিরে গড়ে ওঠা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কেন্দ্রকে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) রাতে মহাষ্টমী পূণ্যস্নান উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই নতুন উদ্যোগের কথা জানান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার।
জেলা প্রশাসক জানান, লাঙ্গলবন্দের অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিশাল সুযোগ রয়েছে এবং এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে খুব দ্রুত সরকারের কাছে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে। এ ছাড়াও ইতিমধ্যে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, এই পবিত্র স্থানটি শুধু ধর্মীয় নয়, এটি আমাদের জাতীয় সম্প্রীতি ও ঐতিহ্যেরও প্রতীক। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে লাঙ্গলবন্দ পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হবে, যেখানে সব ধর্মের মানুষ আসতে আগ্রহী হবেন।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, আগামী বছর থেকে পুণ্যস্নানের সব আয়োজন আরও বিস্তৃত করতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে।
দেশ-বিদেশ থেকে আগত লাখো পূণ্যার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা মুসলমান-হিন্দু সবাই মিলে এই আয়োজন সফল করেছি। এটি আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার উজ্জ্বল নিদর্শন। বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিতে হবে, বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করেন।
সভা শেষে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার পূণ্যস্নান উপলক্ষে স্থাপিত বিভিন্ন সেবা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তিনি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং উপস্থিত জনসাধারণের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে সেবার মান যাচাই করেন। পরে তিনি লাঙ্গলবন্দের বিভিন্ন ঘাট পরিদর্শন করে স্নানের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাও পর্যালোচনা করেন।
উল্লেখ্য, এবারের মহাষ্টমী পুণ্যস্নান উৎসব শুরু হয়েছে শুক্রবার (৪ এপ্রিল) রাত ২টা থেকে, যা চলবে ৫ এপ্রিল রাত ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। স্নানের লগ্ন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশ-বিদেশ থেকে আগত লাখো পূণ্যার্থী অংশগ্রহণে উৎসবে প্রাণচাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং পার্শ্ববর্তী ভারতের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রশাসন এবার গ্রহণ করেছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রথমবারের মতো মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী ও ড্রোন। পূণ্যার্থীদের সুবিধার্থে দিকনির্দেশনামূলক ম্যাপও স্থাপন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং একে ঘিরে গড়ে ওঠা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ঐক্য ও মানবিক চেতনার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।