কোটা আন্দোলন
রবিবার দেশের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ডাক
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৮:২৬ পিএম
রবিবার দেশের সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ডাক
কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দুদিনের কর্মসূচি দিয়ে আজকের মতো শাহবাগ মোড় ত্যাগ করেছেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, শুক্রবার অনলাইন-অফলাইনে বৈঠক, শনিবার বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি এবং রবিবার সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ অবস্থান ধর্মঘট।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশের শেষে এ ঘোষণা দেন কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারী ঢাবি শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম। এর আগে দুপুর ১২টা থেকেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন।
এসময় নাহিদ বলেন, কোটা পুনর্বহাল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটি প্রহসন। নির্বাহী বিভাগ একটি আদেশ দিচ্ছে বিচার বিভাগ সেটি বাতিল করে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এই প্রহসন মেনে নিবে না। নির্বাহী বিভাগের এখনো ক্ষমতা আছে কোটা প্রথা বাতিল করার।
তিনি বলেন, নির্বাহী বিভাগকে আমরা প্রশ্ন করতে চাই তারা কী পরিপত্র জারি করলো যেটা পাঁচ বছরের মধ্যে হাইকোর্ট বাতিল করে দিলো? তার মানে এই পরিপত্রের মধ্যে কোনো ঝামেলা আছে। আমরা এই প্রহসন মানি না। আমাদের এই আন্দোলন চলমান থাকবে। সরকার থেকে আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়নি। আমরা এর নিন্দা জানাই।
গত কয়েকদিন ধরে হাইকোর্ট কর্তৃক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কারী হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ১৯৭১ সালে বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয়েছিলো। কিন্তু এই কোটা পদ্ধতির ফলে চাষার ছেলে চাষা, রাজমিস্ত্রীর ছেলে রাজমিস্ত্রী, মজুরের ছেলে মজুর থেকে যাবে। আমরা একই প্রশ্নে পরীক্ষা দেবো, একই প্রশ্নে লিখবো, একই প্রশ্নে ভাইভার মুখোমুখী হবো। কিন্তু তারা কোটা সুবিধার কারণে একাই একশ সুবিধা পাবে, সেটা মেনে নেবো না। তাহলে কি জন্মই আমাদের আজন্ম পাপ?
তিনি বলেন, সরকার কোটা চায় না, প্রশাসন কোটা চায় না, শিক্ষকরা কোটা চায় না, বিশ্ববিদ্যালয় কোটা চায় না, তাহলে কোটা চায় কে? সরকার যেখানে কোটা পদ্ধতি বাতিল করেছে সেখানে কোন অদৃশ্য শক্তিবলে এই কোটা বহাল রাখা হয়? আমরা এই অদৃশ্য শক্তির হাত গুঁড়িয়ে দেবো।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় হাইকোর্ট কর্তৃক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে থেকে মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর-টিএসসি হয়ে বেলা সোয়া ১২টায় শাহবাগ মোড়ে যায়।
এসময় শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে আশেপাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে শাহবাগ অচল হয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকার পরে অবরোধ তুলে নিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত করলে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
তাদের দাবিগুলো হলো-
১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধা-ভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে।
২. ১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শুন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।
৪. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধা-ভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।