কুড়িগ্রামে তথ্য গোপন করে ভারতীয় নাগরিকের বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে তোলপাড়
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ এএম
কুড়িগ্রামে তথ্য গোপন করে ভারতীয় নাগরিকের বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে তোলপাড়
তথ্য গোপন করে মোস্তাফিজার রহমান নামের ভারতীয় নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ায় কুড়িগ্রামে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তিনি কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সহসভাপতি।
ঐ ভারতীয় নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল চেয়ে কুড়িগ্রাম জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সহিদুল ইসলাম কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর)অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মোস্তাফিজার রহমান ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার সাহেবগঞ্জ থানার খুবিরের কুটি (চৌধুরীর হাট) গ্রামের মোজাহারুল হক মাতা- মোছাঃ কবিজন নেছার পুত্র। তিনি ১৯৭৬ সালে ভারতীয় এক হিন্দু রমনীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভারত থেকে পালিয়ে এসে কুড়িগ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করেন। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে পুলিশ তাদেরকে আটক করে এবং আইনের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম জেলহাজতে প্রেরণ করেন। প্রায় ৬মাস জেল খাটেন।
কুড়িগ্রাম -২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক উমর ফারুক বলেন, মোস্তাফিজার রহমান ভারতীয় নাগরিক এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে দীর্ঘ সময় কুড়িগ্রামে কিভাবে আছেন। নাগরিকত্ব কিভাবে পেলেন সেটা আমার জানা নেই। তিনি দীর্ঘদিন জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।পরে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন।
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও কুড়িগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু বকর সিদ্দিক বলেন, তার জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মস্থান কুড়িগ্রাম উল্লেখ করা হয়েছে। এটি তথ্য গোপনের শামিল। জন্ম নিবন্ধন সনদ ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার কোন আইন নেই। কিভাবে এনআইডি কার্ড পেলেন তা নির্বাচন কমিশন বলতে পারবেন।
সাবেক মেয়র আরও জানান, মোস্তাফিজার রহমানের এনআইডিতে উল্লেখ রয়েছে তার জন্মস্থান কুড়িগ্রাম, ঠিকানা দিয়েছেন কুড়িগ্রাম পৌরসভার হাসপাতাল পাড়া এলাকার বাসিন্দা। আসলে ৮০'র দশকে ডিজিটালাইজড না থাকায় তথ্য গোপন করে তিনি কুড়িগ্রামের বাসিন্দা হয়েছেন। তাছাড়া তিনি ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সস্ত্রীক কুড়িগ্রাম জেলখানায় জেল খেটেছেন। কতৃপক্ষ জেল কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করলে বিষয়টি খোলাসা হবে।
কুড়িগ্রাম -১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুর রহমান রানা বলেন, কুড়িগ্রামের মানুষ অত্যন্ত সহজ সরল। মানবিক দিক বিবেচনা করে কুড়িগ্রামের মানুষ তার বসবাসে সহযোগিতা করেছে। তবে তিনি যে ভারতীয় নাগরিক এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।
মোস্তাফিজার রহমানের বিরুদ্ধে নাগরিকত্ব ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমার মানসম্মান ক্ষুন্ন করার জন্য একটি মহল বিভিন্ন ভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন আমার জাতীয় পরিচয়পত্র প্রমাণের জন্য প্রমাণাদি চাইলে আমি দিতে প্রস্তুত আছি।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান,জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য দেওয়া অথবা তথ্য গোপন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তথ্য গোপন করে এক ভারতীয় ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছেন মর্মে আমার দপ্তরে এক ব্যক্তি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।